জেলা প্রতিনিধি ভোলাঃ- ভোলার মনপুরার মেঘনায় জলদস্যু আতঙ্কে রাতে মাছ ধরতে যেতে পারছেনা জেলেরা। রাতে মেঘনায় মাছ শিকারে গেলেই দস্যুবাহিনী হামলা চালিয়ে লুটে নেয় জাল-নৌকাসহ সর্বস্ব। এমনকি অস্ত্রের মুখে জেলেদের অপহরণ করে নিয় যায়, পরে মোটা অঙ্কের টাকা দিলে মেলে মুক্তি। এমন অভিযোগ ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার জেলেদের।
জেলারা আরও জানান, নদীতে মাছ ধরতে নৌকা প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার করে অগ্রিম টাকা দিয়ে জলদস্যুদের কাছ থেকে ‘বিশেষ টোকেন’ সংগ্রহে জেলেদের বাধ্য করছে দস্যুবাহিনী। দস্যুবাহিনীর হুমকির ভয়ে জেলেরা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে না জানিয়ে গোপন রাখছেন।
জানা যায়, গত ২৭ জুলাই রাতে মনপুরার দক্ষিণে পাতালিয়ার চর ও নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন মেঘনায় মাছ ধরছিল রহমানপুর গ্রামের তিন জেলে গিয়াসউদ্দিন মাঝি ,মিলন মাঝি ও রাজিব মাঝির ট্রলার। হঠাৎ করে একদল জলদস্যু তাদের ট্রলারে আক্রমণ করে তাদেরকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে লাখ টাকায় মুক্তিপনে উদ্ধার করা হয়।
ডাকাতদের কাছ থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা মাঝের ঘাটের জেলে মো. গিয়াস উদ্দিন মাঝি জানান, গত ২৭ জুলাই গভীর রাতে তিনিসহ ১০ জেলে মনপুরা ও হাতিয়া উপজেলার মাঝামাঝিতে মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে যান। এসময় ১৫-২০ জনের একটি ডাকাত দল তাদের ওপর হামলা চালিয়ে মাছ ও জাল লুট করে। পরে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এর সাথে আরো দুই ট্রলারে হামলা করে দুই মাঝিকে তার সাথে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে মোবাইল ফোন থেকে ডাকাতরা আড়ৎদারে ও পরিবারের কাছে লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। পরে রফাদফা করে পরিবারের সদস্যরা ডাকাতদের মোবাইলে বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট টাকা পাঠালে তাদের দুই দিন পর রাতে মুক্তি দেয়।
জলদস্যুদের টোকেনের বিষয় দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে মো. হাফিজ মাঝি ও মো. হারুন মাঝি জানান, এই বছর ভরা মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাকাতরা টোকেন বিক্রি শুরু করেছে। টোকেন যারা সংগ্রহ না করে তাদের ট্রলারে ডাকাতি, হামলা, লুটপাট ও অপহরণ হয়। তাই আমরা বাধ্য হয়ে ডাকাতদের কাছ থেকে ৫-১০ হাজার টাকার বিনিময়ে টোকেন সংগ্রহ করেছি। তবে কীভাবে টোকেন সংগ্রহ করেছেন সে বিষয়ে মুখ খোলেননি তারা। শুধু বলেন, ডাকাতদের সোর্স প্রতিটি মৎস্য ঘাটেই রয়েছে।
মাঝের ঘাটের আড়তদার ও জাতীয় মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আকতার শিকদার বলেন, ঘাটের অনেক ব্যবসায়ী ঢাকা ও চাঁদপুরের আড়তদার থেকে মোটা অংশের টাকা দাদন এনে জেলেদের দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে জেলেরা ডাকাত আতঙ্কে রয়েছে। এতে করে ঠিকমতো মাছ শিকার করতে পারছেন না জেলেরা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তারা লোকসানের মুখে পড়বেন।
তিনি আরও জানান, মেঘনা নদী ও সাগর মোহনায় ডাকাতদের বেশ কয়েকটি বাহিনী রয়েছে। যদি কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও পুলিশ টহল জোরদার হয় তাহলে জেলেরাও মাছ ধরতে পারবে এবং তাদের ব্যবসা ঠিকঠাক চলবে। এজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি সহ ভুক্তভোগী জেলেরা।
এই ব্যাপারে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আহসান কবীর জানান, ডাকাতির ঘটনায় কেউ এখন পর্যন্ত থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এই ব্যাপারে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের স্টাফ অফিসার অপারেশন লে. কমান্ডার রিফাত আহমেদ জানান, জেলেদের জালে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ ধরা পড়ায় ডাকাতির ঘটনা ঘটছে বলে জানতে পেরেছি। জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোস্টগার্ড বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নদীতে নিয়মিত টহল ও তল্লাশি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও ডাকাতদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে জেলেদের রক্ষায় দস্যুদের বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান চালানোর কথা জানান তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
প্রিন্সিপাল শেখ আব্দুল্লাহ
সর্বসত্ব সংরক্ষিত © দৈনিক জনতার কন্ঠ ২৪/২০২৫