
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ-
আচরণবিধির খসড়া ইসি সভায় উঠছে আজ। নির্বাচনি প্রচারে এআই ব্যবহার নিষিদ্ধ, বাড়ছে নজরদারি- জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিপফেইক, মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, পক্ষপাতদুষ্ট, অপপ্রচারমূলক, কুরুচিপূর্ণ বা মানহানিকর কোনো কনটেন্ট—যেমন এডিট করা ভিডিও, অডিও বা বানোয়াট খবর—প্রকাশ করা যাবে না। এমনকি কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক নেতার চেহারা বিকৃত করে প্রচারণা চালানোও নিষিদ্ধ।
এই বিধানসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আজ বৃহস্পতিবার (৭ আগষ্ট) নির্বাচন কমিশনের সভায় এই খসড়ার অনুমোদন চাওয়া হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন ব্যক্তির মতামত নিয়ে খসড়াটি প্রস্তুত করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত ২৯ জুন প্রকাশিত খসড়ায় এসব স্পষ্ট বিধান ছিল না—শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। বিএনপিসহ বিভিন্ন পক্ষের পরামর্শে এবার খসড়ায় এআই অপব্যবহার, সামাজিক মাধ্যমে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ এবং প্রচারণার নিয়ম নিয়ে বেশ কিছু নতুন বিধান যুক্ত হয়েছে।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনি প্রচারণা বা ভোটগ্রহণের দিন ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা এ জাতীয় যন্ত্র ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজন করা যাবে না।
ভোটের দিন অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ মোটরসাইকেল বা যান্ত্রিক যানবাহন ব্যবহার করতে পারবে না। নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে বড় অংকের নগদ লেনদেনে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে—রাজনৈতিক দল ২০ হাজার ও প্রার্থী ১০ হাজার টাকার বেশি লেনদেন করতে চাইলে তা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো রোধ করা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। উন্নত দেশগুলোও মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন সম্পূর্ণ ঠেকাতে পারেনি। আমাদেরও তা মোকাবিলা করতে হবে। তবে গণমাধ্যমের সহযোগিতা নিয়ে এ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা হবে।”
সিইসির সভাপতিত্বে আজকের সভায় চার কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের খসড়াও আলোচনায় আসবে।
খসড়ার ১৬ ধারায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানোর সুযোগ রাখা হয়েছে—তবে প্রার্থী ও সমর্থকদের নির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হবে। প্রতিপক্ষ, সংখ্যালঘু বা অন্য কোনো জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ঘৃণাত্মক বক্তব্য, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার এবং ধর্মীয় বা জাতিগত অনুভূতির অপব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আচরণবিধির তফসিল-১-এ রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকারনামায় একটি নতুন শর্ত যোগ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দলের মনোনীত প্রার্থী কোনো নিষিদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত সংগঠনের সঙ্গে আগে যুক্ত ছিলেন না এবং বর্তমানে নেই—এ মর্মে অঙ্গীকার করতে হবে। একই অঙ্গীকার প্রার্থীদের কাছ থেকেও নেওয়া হবে।
এই বিধান যুক্ত করার কারণ হিসেবে ইসি জানিয়েছে, যাতে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের নেতারা অন্য কোনো দলের হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে পারেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে। বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে সিইসি জানান, “আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। তবে তাদের সমর্থকরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।”
ইসি খসড়ায় রঙিন ব্যানার, লিফলেট, ফেস্টুন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করে প্রচারণা সামগ্রীকে সাদাকালো রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। ব্যানারের সর্বোচ্চ আকার ১০ ফুট বাই ৪ ফুট, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল হবে এ-ফোর সাইজের কাগজে, আর ফেস্টুন হবে ১৮ বাই ২৪ ইঞ্চির মধ্যে সীমিত।
দলীয় প্রধানের পাশাপাশি এবার দলীয় সাধারণ সম্পাদকও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে প্রচারণা চালাতে পারবেন।
আচরণবিধির ১৫ ধারায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের নির্বাচনি প্রচার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তফশিল ঘোষণার পর প্রার্থী সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি আসনের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বা সদস্য পদেও থাকতে পারবেন না। বিএনপির পরামর্শ অনুযায়ী ইসি এই বিধান যুক্ত করেছে।