
জাহাঙ্গীর আলম স্টাফ রিপোর্টারঃ- গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় এক নারীকে গাছে বেঁধে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী ইউনুস মিয়া ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারীকে আমগাছের গোড়ায় দড়ি দিয়ে হাত ও কোমর বেঁধে রাখা হয়েছে। তার মাথার মাঝখান থেকে চুল কাটা, পোশাক এলোমেলো এবং চোখেমুখে নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট। অসহায় দৃষ্টিতে তিনি একদিকে তাকিয়ে আছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার (২৭ জুলাই)। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগী নারী এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন সাংবাদিকরা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই নারী জানান, “রোববার দুপুরে আমি বড় জায়ের বাপের বাড়ি থেকে ফেরার পর ইউনুস মিয়া ও তার লোকজন আমাকে বাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনে। পরে তারা গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে। মাথার চুল কেটে দেয়, জুতার মালা পরিয়ে দেয়। এমনকি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটও করে।”
তিনি আরও জানান, “তারা আমার গরু বিক্রির টাকা নিয়ে গেছে। আমাকে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। সমাজে তাদের এত প্রভাব যে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। থানায় অভিযোগ দিয়েছি, এখন নানা রকম হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”
স্থানীয় সূত্র ও অভিযোগে জানা গেছে, ওই নারী পার্শ্ববর্তী গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে কাপড় সেলাই করতে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার পর তাকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে নির্যাতন শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা গাছে বেঁধে তাকে মারধর করা হয়। কাঠ ও বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। এরপর মাথার চুল কেটে, মুখে রং মেখে এবং জুতার মালা পরিয়ে বিবস্ত্র করে রাখা হয়। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারান। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান মজনু ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মজনু বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই এবং তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। আইনগত ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছি।”
এদিকে অভিযুক্ত ইউনুস মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। বরং তার লোকজন সাংবাদিকদের ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন।
পলাশবাড়ী থানার আওতাধীন হরিণাবাড়ী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) সবুজার আলী বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে নির্যাতনের সত্যতা মিলেছে। মামলা করার জন্য ভুক্তভোগীকে বলা হয়েছে।”
স্থানীয়দের দাবি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে এমন অমানবিক ঘটনা আর না ঘটে।