
বিশেষ প্রতিনিধি আলমগীর হোসেনঃ- ( গাজীপুর থেকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন)
গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দেওয়ালিয়াবাড়ী ক্লাব মোড়—যেখানে আতঙ্কের আরেক নাম এখন রাজিব। বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত এই ব্যক্তি ফের সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় নতুন করে আলোচনায়। মাদক, চাঁদাবাজি, জমি দখল, সন্ত্রাসসহ একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের ভূমিকা রীতিমতো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক মফিজুল ইসলাম জানান, গত ১৯ জুলাই রাজিব ও তার লোকজন তাকে পরিকল্পিতভাবে গ্যারেজে আটকে রেখে নির্মমভাবে পেটায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর ক্ষতের চিহ্ন স্পষ্ট হলেও প্রাণে বেঁচে গিয়ে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সেখান থেকে সামান্য সুস্থ হয়ে ২০ জুলাই কোনাবাড়ী মেট্রো থানায় হাজির হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
তবে অভিযোগ দায়েরের পর দীর্ঘ ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত অভিযুক্ত রাজিবকে গ্রেফতার করা হয়নি। বরং রাজিব এখনো দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, স্থানীয়দের মধ্যে ভীতি ছড়াচ্ছেন। এমনকি মফিজুলের ঘটনায় প্রতিবাদ জানানোয় সিনিয়র সাংবাদিক ও কোনাবাড়ী থানা প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ জুলফিকার আলী জুয়েলকেও সরাসরি হুমকি দেন রাজিব। তাকে ‘মেরে ফেলা হবে’ বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
একাধিক সূত্র জানায়, থানায় অভিযোগের পর রাজিবের বিরুদ্ধে তদন্তের নামে কালক্ষেপণ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তাকে তলব, জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেফতার করা হয়নি। সাংবাদিক সমাজ ও এলাকাবাসীর প্রশ্ন—দোষী যদি এতটাই স্পষ্ট হয়, তাহলে আইনি পদক্ষেপে দেরি কেন?
এক প্রবীণ সাংবাদিক বলেন, “আমরা একাধিকবার থানায় গিয়ে জানিয়েছি, রাজিব কতটা ভয়ংকর। অথচ তিনি আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ যেন অপরাধীদের জন্য আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে প্রশাসন।”
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, “যদি একজন গণমাধ্যমকর্মীকে প্রকাশ্যে মারধর করে, হুমকি দিয়ে রাজীবরা ঘুরে বেড়াতে পারে—তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার আশা করবো কোথা থেকে?”
তিনি আরও বলেন, “আমরা অবিলম্বে রাজিবকে গ্রেফতারের জোর দাবি জানাই এবং প্রশাসনের দায়িত্বশীল পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি।”
রাজিবের বিরুদ্ধে রয়েছে সুসংগঠিত সন্ত্রাসী বাহিনীর অভিযোগ। এলাকার ব্যবসায়ী, জমির মালিক এমনকি সাধারণ বাসিন্দারাও বলছেন, তারা নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। অনেকে পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের মতে, এটি শুধু একজন সাংবাদিকের উপর হামলা নয়—এটি গোটা সাংবাদিক সমাজ ও মুক্ত মতপ্রকাশের উপর সরাসরি আঘাত। এ ধরণের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে সাংবাদিকতার পথ আরও বিপদসঙ্কুল হবে।