
জনতার কন্ঠ বিনোদন ডেস্কঃ-
জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থী ও দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে শোবিজ অঙ্গনের অনেক তারকা যখন রাজপথে নেমেছিলেন, তখন বিনোদন জগতেও দেখা দেয় বিভক্তি। শিল্পীদের একাংশ ছাত্র-জনতার পক্ষে রাজপথে থাকলেও, অপর অংশ স্বৈরাচার শেখ হাসিনার তোষামোদে ব্যস্ত ছিলেন। ছাত্র-জনতার রক্তে রাজপথ যখন রঞ্জিত, মুক্তিকামী দেশবাসী যখন তাদের নির্মম মৃত্যুতে কাঁদছে, তখন ইট-পাথরের ভবনের জন্য অঝোরে কেঁদেছেন কিছু সুবিধাভোগী শিল্পী।
২০২৪ সালের ১৮ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় বিটিভি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি দেখতে এসে চোখের জল ফেলেন আওয়ামীপন্থি শিল্পীদের একটি দল। ১ আগস্ট বিটিভি প্রাঙ্গণে এই অগ্নিকাণ্ডের প্রতিবাদে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা ফেরদৌস, রিয়াজ, আজিজুল হাকিম, অভিনেত্রী নিপুণ, সোহানা সাবা, রোকেয়া প্রাচী, জ্যোতিকা জ্যোতি, নূনা আফরোজ, কণ্ঠশিল্পী শুভ্রদেব, নির্মাতা এসএ হক অলীক, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরুসহ অনেকে। তাদের হাতে ছিল নানা স্লোগানসংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। কিন্তু নিহত ছাত্র-জনতার জন্য তাদের চোখে কোনো পানি ছিল না।
এর আগে শেখ হাসিনার সমর্থনে বিটিভি ভবন পরিদর্শন করেছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, সারা যাকের, পিযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, গোলাম কুদ্দুস, ঝুনা চৌধুরী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর ও শাইখ সিরাজ প্রমুখ।
এ ছাড়া, ছাত্র আন্দোলন দমন করতে আওয়ামীপন্থি এসব শিল্পী ‘আলো আসবেই’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালু করেছিলেন। সেখানে আন্দোলন থামাতে ‘গরম পানি ঢেলে দেওয়া’সহ নানা পরিকল্পনা নেওয়া হতো। সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাতের সমন্বয়ে এ গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ, রিয়াজ, সাজু খাদেম ও অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি।
গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন— অরুণা বিশ্বাস, তানভীন সুইটি, জ্যোতিকা জ্যোতি, রোকেয়া প্রাচী, সোহানা সাবা, সুবর্ণা মুস্তফা, বিজরী বরকতুল্লাহ, স্বাগতা, শমী কায়সার, আশনা হাবীব ভাবনা, উর্মিলা শ্রাবন্তী কর, হৃদি হক, দীপান্বিতা মার্টিন, নূনা আফরোজ, মেহের আফরোজ শাওন, সঙ্গীতা মেখাল, শাহনূর, আজিজুল হাকিম, রওনক হাসান, রফিক (রজনীগন্ধা), জামশেদ শামীম, খান জেহাদ, ফজলুর রহমান বাবু, আশরাফ কবীর, সাইমন সাদিক, জায়েদ খান, ঝুনা চৌধুরী, লিয়াকত আলী লাকি, সাইফ খান, স্মরণ সাহা, সায়েম সামাদ, শাকিল (দেশনাটক), শহীদ আলমগীর, মো. শাহাদাত হোসেন, মিলন ভট্ট, নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ, মাসুদ পথিক, এবার্ট খান, জুয়েল মাহমুদ, মুশফিকুর রহমান গুলজার, এসএ হক অলীক, রুবেল শঙ্কর, রাজিবুল ইসলাম রাজিব, সৈয়দ আওলাদ, সাবেক এমপি হাসান মাহমুদ, হারুনুর রশিদ, সাখাওয়াত মুন, নাহিদ, প্রণীল ও রুনি প্রমুখ।
এদের অনেকেই এখনও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ্যে জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতা করছেন।
এ ছাড়া, কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছিলেন কিছু তারকা। ছাত্রদের স্লোগানের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেন—
অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম ও সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দেন। তারা দাবি করেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হচ্ছে।
আন্দোলনের সময় কিছু তারকা নীরব থেকেও হাসিনার পক্ষে কাজ করেছেন। অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী গণভবনে গিয়ে হাসিনাকে ‘মা’ সম্বোধন করে গান শুনাতেন। অভিনেতা মীর সাব্বির ও অভিনেত্রী তারিন জাহানও হাসিনার বন্দনায় সক্রিয় ছিলেন।
অন্যদিকে, চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেন এবং আন্দোলনের সময় বিদেশ থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছবি পোস্ট করে আলোচনায় আসেন। চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ আন্দোলনের সময় পুরোনো বিয়ে বিচ্ছেদের খবর সামনে এনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন।
এভাবে, বহু দলকানা শিল্পী রাজপথ থেকে সামাজিক মাধ্যম পর্যন্ত প্রতিটি পরিসরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার হয়ে কাজ করেছেন এবং ছাত্র-জনতার ন্যায়সংগত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা চালিয়েছেন।