
সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল মিয়ার বিরুদ্ধে সংরক্ষিত সামাজিক বনায়নের প্রায় দেড় একর জমি বেদে সম্প্রদায়ের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেদে সম্প্রদায়ের লোকদের এনে স্থানীয় ভোটার বানানোরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মৌলভীবাজার উত্তরপাড়া টাঙ্গাইলাচালা এলাকায় প্রায় দেড় একর জমি বেদে সম্প্রদায়ের দখলে চলে গেছে। একসময় এ জমিতে বনজ ও ঔষধি গাছগাছালিতে ভরপুর সামাজিক বনায়নের প্লট ছিল। এখন সেখানে নতুন একটি পাড়া গড়ে উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, চেয়ারম্যান বনের এসব জমি বেদে সম্প্রদায়সহ অন্য এলাকার লোকদের কাছে প্রতি শতাংশ মাত্র ২ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এ জমি বিক্রি করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন জানিয়েছেন, প্রমাণস্বরূপ চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর করা নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে কাগজ তাদের দেয়া হয়েছে।
বেদে সম্প্রদায়ের ডালিম ইসলাম বলেন,
“আমাদের আদি বাড়ি ঢাকা সাভারে। চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রতি শতাংশ ২ থেকে ৩ হাজার টাকায় জমি কিনেছি। প্রায় ৪০–৫০টি পরিবার এভাবে জমি কিনে এখানে বসবাস করছে।”
আরেকজন রবিউল ইসলাম জানান,
“আমরা আসার আগে এখানে সামাজিক বনায়নের জমি ছিল। চেয়ারম্যান আমাদের জমি বিক্রি করেছেন এবং ভোটার বানিয়েছেন। অনেকেই সরকারি ভাতাও পাচ্ছেন। আমরা যতদিন বেঁচে আছি এই চেয়ারম্যানকেই ভোট দেব।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন শুধু বনের সাপ, ব্যাঙ, পাখি শিকার করছে না, পরিবেশ ধ্বংসকারী নানা কর্মকাণ্ডেও জড়িত। এলাকায় চুরি-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধও বেড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মো. জামাল মিয়া মোবাইল ফোনে বলেন,
“এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি এসবের সাথে জড়িত নই।”
এ কথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিট কর্মকর্তা রুমিউজ্জামান বলেন,
“কাহারতা মৌজার এমএম চালা বিটের ৩০ নম্বর দাগের প্রায় দেড় একর জমি ৮ বছর আগে জামাল চেয়ারম্যান জবরদখল করেছেন। এ বিষয়ে মামলাও রয়েছে। যেকোনো সময় যৌথবাহিনীর সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।”
বহেরাতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা এমরান আলী জানান,
“আমি সাত মাস আগে এখানে যোগদান করেছি। শুনেছি চেয়ারম্যান বনের জমি বিক্রি করেছেন। কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান চালাতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছি। সাংবাদিকসহ সবার সহযোগিতা পেলে অবশ্যই অভিযান চালিয়ে জমি উদ্ধার করা হবে।”
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন,
“বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন যেহেতু বাংলাদেশের নাগরিক, চেয়ারম্যান যদি তাদের জন্মসনদ দিয়ে থাকেন, তাহলে তারা স্থানীয় ভোটার হতে পারেন।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা বনায়ন কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল রনি বলেন,
“এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।