
জাহাঙ্গীর আলম | স্টাফ রিপোর্টার |
পটুয়াখালীর গলাচিপায় তিন দফা দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সোমবার (১৩ অক্টোবর) থেকে কর্মবিরতি পালন করেছেন। ২০ শতাংশ বাড়ি ভাতা, ১,৫০০ টাকা মেডিক্যাল ভাতা এবং কর্মচারীদের ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা প্রদানের দাবিতে ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
গতকাল সকালের পর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজের শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষক মিলনায়তনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। কেউ কেউ প্রতিষ্ঠানের সামনে প্রতিবাদী স্লোগানসহ অবস্থান নেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংহতির ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেন।
কর্মবিরতির কারণে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। অনেকেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আড্ডা দেয় বা বাড়ি ফিরে যায়। অভিভাবকরা শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলার গলাচিপা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উলানিয়া হাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কলাগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বড়চত্রা দাখিল মাদ্রাসা, রতনদি তালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিপিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, পানখালী পানজাতীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডাকুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম তাফালবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নলুয়াবাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এনজেড আলিম মাদ্রাসা, কালিকাপুর নুরিয়া কামিল মাদ্রাসা, কোটখালী সিনিয়র মাদ্রাসা, কালারাজা হাট হোসাইনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, মুরাদনগর আহমাদিয়া দাখিল মাদ্রাসা, বোয়ালিয়া ছালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসা, বড়বাঁধ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, উত্তর চর বিশ্বাস ছালেহা খাতুন দাখিল মাদ্রাসা, মধ্য হরিদেবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ছোনখোলা পাতাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পানপট্টি বালিকা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চর চন্দ্রাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গলাচিপা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পানপট্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হরিদেবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উত্তর চরখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চর আগস্তি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সুহরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গলাচিপা মহিলা ডিগ্রি কলেজ, খারিজ্জমা ডিগ্রি কলেজ, বকুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজসহ উপজেলার প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ছিল।
বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, “আমরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কর্মবিরতি পালন করছি। শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি সরকারকে দ্রুত মেনে নিতে হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।”
গলাচিপা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল হোসেন বলেন, “শিক্ষক-কর্মচারীরা ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন করছেন। ঢাকায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলা নিন্দনীয় ও দুঃখজনক।”
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার জানান, সারাদেশব্যাপী শিক্ষকদের কর্মবিরতির প্রভাব গলাচিপাতেও পড়েছে। তিনি বলেন, “এর ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করছি।”
শিক্ষকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা বাড়ি ভাতা ২০ শতাংশ ও ১,৫০০ টাকা মেডিক্যাল ভাতার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি সরকার মাত্র ৫০০ টাকা বাড়ি ভাতা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করায় শিক্ষক সমাজ সেটি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামে। গত রোববার ঢাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শিক্ষক সংগঠন দেশব্যাপী কর্মবিরতির ডাক দেয়, যার অংশ হিসেবে গলাচিপার শিক্ষক-কর্মচারীরা সোমবার থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করছেন।
উল্লেখ্য, গলাচিপা উপজেলায় এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৪৪টি, মাদ্রাসা ৩৪টি ও বেসরকারি কলেজ ৭টি। সোমবার সকাল থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।