জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ রিপোর্টার: গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ইতিহাসে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মোত্তালিব আকন্দ এক স্মরণীয় নাম। বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আবদুল মোত্তালিব আকন্দ গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার জালানাবাদ ইউনিয়নের সালমারা দোয়াল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। মানুষের অধিকার ও এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়েই তিনি রাজনীতিকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন।

সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি গোবিন্দগঞ্জকে একটি শিক্ষা ও উন্নয়নবান্ধব উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করেন। তার সবচেয়ে বড় অবদান ছিল শিক্ষাক্ষেত্রে। তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। স্থানীয়ভাবে তাকে শিক্ষা বিস্তারের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে গণ্য করা হয়।

বিশেষ করে “শামীম এন্ড শাকিল কারিগরি কলেজ” এবং “এম এ মোত্তালিব টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ”সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে তার ভূমিকা আজও স্মরণ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অসংখ্য শিক্ষার্থী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে।

শিক্ষার পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নেও তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। তার সময়ে গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক, কালভার্ট, সেতু নির্মাণ ও সংস্কার কাজ হয়। গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নেওয়া এসব প্রকল্প স্থানীয় অর্থনীতি ও জনজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এছাড়া তিনি বন্যা ও দুর্যোগকালে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। ত্রাণ বিতরণ, চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে তার সক্রিয় ভূমিকা স্থানীয় জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করে।

রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন জনঘনিষ্ঠ ও সদালাপী নেতা। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শোনার জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে গোবিন্দগঞ্জবাসী একজন অভিভাবকতুল্য নেতাকে হারিয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।

আজ তিনি আমাদের মাঝে না থাকলেও তার রেখে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও মানবিক অবদান গোবিন্দগঞ্জের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এম এ মোতালিবের উত্তরসূরি শামীম কায়সার (লিংকন): গোবিন্দগঞ্জের উন্নয়ন ও নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা

গাইবান্ধা–৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রয়াত সংসদ সদস্য এম এ মোতালিব এবং তার সুযোগ্য উত্তরসূরি শামীম কায়সার (লিংকন) একে অপরের সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িত দুটি নাম। এম এ মোতালিবের মৃত্যুতে শূন্য হয়ে পড়া এই আসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তার পুত্র শামীম কায়সার (লিংকন), যিনি পরবর্তীতে সংসদ সদস্য হিসেবে গোবিন্দগঞ্জের উন্নয়ন ও জনসেবায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

শামীম কায়সার (লিংকন) জন্মসূত্রেই রাজনীতি ও জনসেবার পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। পিতা এম এ মোতালিব ছিলেন গোবিন্দগঞ্জের একজন প্রভাবশালী ও জনবান্ধব সংসদ সদস্য। তার অসমাপ্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা ও জনসেবার ধারাবাহিকতা রক্ষার লক্ষ্যেই শামীম কায়সার (লিংকন) সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ

পিতার মৃত্যুজনিত কারণে গাইবান্ধা–৪ আসনে শূন্যতা সৃষ্টি হলে শামীম কায়সার (লিংকন) একই আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্বে আসেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি গোবিন্দগঞ্জের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন এবং নতুন প্রকল্প গ্রহণে অগ্রাধিকার দেন।

তিনি নিয়মিত এলাকায় অবস্থান করে জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বজায় রাখেন এবং পিতার মতোই জনঘনিষ্ঠ প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

শিক্ষা খাতে ধারাবাহিক উন্নয়ন

শিক্ষা ছিল এম এ মোতালিবের অন্যতম অগ্রাধিকার খাত, আর সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন শামীম কায়সার (লিংকন)। তার দায়িত্বকালীন সময়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়।

দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সহায়তা, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি বরাদ্দ আনয়নে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন

পিতার শুরু করা অনেক সড়ক ও অবকাঠামো প্রকল্প শামীম কায়সার (লিংকন) সম্পন্ন করেন। তার সময়কালে গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়ক পাকাকরণ, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ ও সংস্কার কাজ বাস্তবায়িত হয়। এতে করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সহজ হয় এবং কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসে।

বিদ্যুৎ, পানি ও নাগরিক সুবিধা

গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ সম্প্রসারণ, নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন এবং গভীর নলকূপ ও বিশুদ্ধ পানির প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেন। ফলে বহু এলাকায় পানীয় জলের সংকট কমে আসে।

ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান

পিতা এম এ মোতালিবের ন্যায় শামীম কায়সার (লিংকন) ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তার সহায়তায় বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ মাঠ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়, যা সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে ভূমিকা রাখছে।

মানবিক ও সমাজকল্যাণমূলক ভূমিকা

দুর্যোগ ও সংকটকালে শামীম কায়সার (লিংকন) ছিলেন মানুষের পাশে থাকা একজন নেতা। বন্যা, অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য ত্রাণ বিতরণ, চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে তার সরাসরি অংশগ্রহণ স্থানীয়দের প্রশংসা অর্জন করে।

মূল্যায়ন

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সচেতন মহলের মতে, প্রয়াত সংসদ সদস্য এম এ মোতালিবের মৃত্যুর পর শামীম কায়সার (লিংকন) দায়িত্ব গ্রহণ করে পিতার উন্নয়ন দর্শন ও জনসেবার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন।

গাইবান্ধা–৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের উন্নয়ন ইতিহাসে পিতা-পুত্রের এই নেতৃত্ব একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ধানের শীষের প্রার্থী শামীম কায়সার (লিংকন)

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গাইবান্ধা–৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে শামীম কায়সার (লিংকন) নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে তিনি দলের দুঃসময়ে মাঠে সক্রিয় থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারে ভূমিকা রেখে চলেছেন।

গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে তিনি তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে কাজ করছেন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে গোবিন্দগঞ্জের শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সম্পর্কে মতামত নিচ্ছেন তিনি।

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, প্রয়াত সংসদ সদস্য এম এ মোতালিবের উন্নয়ন দর্শন ও জনসেবার রাজনীতির ধারাবাহিকতা বহন করে শামীম কায়সার (লিংকন) আবারও গোবিন্দগঞ্জের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তিনি শিক্ষা বিস্তার, অবকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মানবিক সহায়তাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা তুলে ধরছেন।

বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় গোবিন্দগঞ্জের ভোটারদের মাঝে পিতা–পুত্রের উন্নয়ন ও নেতৃত্বের স্মৃতি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অতীত অভিজ্ঞতা, মাঠপর্যায়ের রাজনীতি এবং সাংগঠনিক সক্রিয়তার কারণে শামীম কায়সার (লিংকন) এ আসনে একজন গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।

 

সব মিলিয়ে, গাইবান্ধা–৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য এম এ মোতালিবের উন্নয়নধারা এবং তার উত্তরসূরি শামীম কায়সার (লিংকন)-এর বর্তমান রাজনৈতিক ভূমিকা এই জনপদের রাজনীতিতে একটি ধারাবাহিক ও তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।